মঙ্গলবার, ০৮ Jul ২০২৫, ০৬:২৫ অপরাহ্ন
হারুন-অর-রশিদ বাবু- বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যার মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল স্বৈরাচারী হাসিনার গদিতে আগুন জ্বালানোর প্রাথমিক এবং প্রথম ধাপ। গত ৫ আগষ্ট পরবর্তী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পরে পীরগাছার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমন্বয়ক পদ পেয়ে, ফারদিন এহসান মাহিম বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার নাম ভাঙ্গিয়ে, নানামুখী অনিয়ম দূর্ণীতির সাথে যুক্ত হয়ে “জুলাই স্প্রিট”কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এছাড়াও পারিবারিকভাবে বিপুল অর্থ বৈভবের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উপজেলার বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার।
সোমবার (১৬ জুন) ২০২৫ইং সকাল অনুমান ১১টায় রংপুর পীরগাছা উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার পক্ষে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন। দুপুরের দিকে ফারদিন এহসান মাহিমকে ডেকে নেন এবং তার বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উপস্থাপন করেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে না পারায়, ইউএনওর কক্ষে প্রায় ৩ ঘন্টা অবরুদ্ধ ছিলেন মাহিম।
ঢাকা গ্রীণ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাইফ আলী রাফিদ, পীরগাছা সরকারি কলেজের ইশতিয়াক আহমেদ কৌশিক, ঢাকা সিটি ইউনিভার্সিটির মো. রাব্বি, চট্রগ্রাম বিদ্যালয়ের সৈয়দ তানজিদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহেল তানভির যৌথভাবে সাংবাদিকদের বলেন, পীরগাছার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতা পরিচয়ে মাহিম, গত ৫ আগষ্ট পরবর্তী প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনীতিবীদদের সাথে থেকে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার নাম ভাঙ্গিয়ে নানামুখী অনিয়ম দূর্ণীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জরিয়ে পরেন। এছাড়াও ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর থেকে বেশ অর্থ বৈভবের মালিক হয়েছে তার পরিবার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যোগসাজশে বাগিয়ে নিয়েছে একাধিক খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) ডিলারশীপ।
তারা আরও বলেন, মাহিম নিজস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে জুলাই স্প্রিটকে বিক্রি করে দিয়েছে, সে মুলত আওয়ামী দোষর। সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার জে এন মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে সরকারি বরাদ্দকৃত খেলা সামগ্রি ক্রয়ের এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় আত্নসাৎ করেছে। জুলাই শহীদদের জন্য সরকারি বরাদ্দের অর্থ থেকে কমিশন খাওয়াসহ, বৈষম্যবিরোধীর নামে ভিজিএফ, ভিজিডি ভিডব্লিউবি ও ইজিপিপি প্রকল্পের ভাগ নিয়ে নিজের পকেট ভারি করেছেন। পীরগাছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অভিযোগ তদন্তের নামে প্রায় ১২ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেছেন। উপজেলার সদর ইউনিয়নের নির্মাণাধীন সর্দারপাড়া জামে মসজিদের সংস্কারের নামে ১০ লাখ টাকা আত্নসাৎ করেছেন সে।
ছাত্রনেতারা আরও বলেন, মাহিম একটা চাঁদাবাজ, তার বাবা আব্দুল মাজেদ সরদার একজন চাঁদাবাজ। আমরা আজকে ইউএনওর সামনে এই বাটপারকে ধরেছি, লুটপাটের হিসেব দিতে না পারলে জুতার মালা দিয়ে তাকে পুরো পীরগাছা ঘুরানো হবে। আমরা জুতার মালা তৈরি করছি। এই মাহিম ইদানীং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসহ এনসিপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তার কর্মকাণ্ডে পীরগাছার সম্মুখ শাড়ির জুলাই যোদ্ধারারা হতাশ। তারা আরও বলেন, ফারদিন এহসান মাহিমের অপকর্মকে বরাবরই আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে আসছে, ইউএনও নাজমুল হক সুমন। তবে ইউএনও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি মাহিমকে কোন আশ্রয় প্রশ্রয় দেইনি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সমন্বয়ক ফারদিন এহসান মাহিম বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের কিছু অভিযোগ সত্য অনেক ক্ষেত্রে আমি তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারিনি। অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয় তিনি অস্বীকার করেন। ভিজিএফ, ভিজিডি, ভিডব্লিউবি ও ইজিপিপি প্রকল্পের বিষয়ে বলেন, যখন যা পেয়েছি তা বন্টন করেছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখিত আকারে দায়ের করা হচ্ছে, অভিযোগগুলো তদন্ত হোক পরে কথা বলবো।
ইউএনও নাজমুল হক সুমন বলেন, উপজেলা ছাত্র সমন্বয়ক ‘ফারদিন এহসান মাহিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভিজিএফ ভিজিডি, ইজিপিপি প্রকল্পের ভাগ দেয়া ও অনিয়ম দূর্ণীতিতে আশ্রয় প্রশ্রয়ের প্রশ্ন এড়িয়ে যান তিনি।